আল্লাহর নবী ইবরাহিম, মুসা,ঈসা ও মুহাম্মদ (সাঃ) কিভাবে ইবাদত করতেন?
আল্লাহর নবী ইবরাহিম, মুসা,ঈসা ও মুহাম্মদ (সাঃ) কিভাবে ইবাদত করতেন?
বিশিষ্ট্য ইসলামিক স্কলার আহমদ দীদাত একবার সৌদী আরবের জেদ্দা নগরীতে সফরে এসে আমাদেরকে তার জীবনের একটি অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন।
তিনি বললেনঃ তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার দারবান শহরের একটি মসজিদ পরিদর্শনে আসা একদল ইহুদী ও খৃষ্টানের সাথে ছিলেন। মসজিদে ঢুকে তিনি নিজের জুতা খুলে তাদেরকেও তা খুলতে বললেন। তারা সবাই তার কথামত জুতা খুলে ফেলল।
তিনি তাদেরকে মসজিদে জুতা খোলার কারণ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে তারা উত্তরে বললঃ আমরা জানি না। ওই সময় আহমদ দীদাত তাদের কাছে ব্যাপ[রটা স্পষ্ট করে দিয়ে বললেনঃ হযরত মুসা (আঃ) যখন তুর পাহাড়ে উঠেছিলেন তখন আল্লাহ তায়ালা তার সাথে কথা বলেছিলেন।
"অতঃপর তিনি বললেনঃ এই স্থানের নিকটবর্তী হইও না। তোমার পায়ের জুতাসমূহ খুলে ফেল। কেননা তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছ তা পবিত্র ভূমি। (এক্সোডাসঃ ৫/৩)
এরপর যখন তারা একত্রে বসে এদিক ওদিক দেখছিলেন তখন আহমদ দীদাত তাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ওযু করতে গেলেন। অযু শেষ করে তাদের সাথে মিলিত হয়ে বললেন ওযু শুধুমাত্র শরীরের জন্যই উপকারী নয়। মুসলমানগণ প্রতিদিন পাচবার অযু করে এবং এটার একটা ঐতিহাসিক সূত্র রয়েছেঃ-
"তিনি তাতে পানি রাখলেন সমাবেশ স্থলে প্রবেশ ও যবেহের স্থানে যাওয়ার সময় আল্লাহ কর্তৃক নির্দেশিত পন্থায় মুসা, হারুন ও তার সন্তানদের হাত ও পা সমুহ ধৌত করার জন্য"। (এক্সোডাসঃ৪০/৩১-৩২)
ফরজ নামাজ পড়ার পর আহমদ দীদাত উক্ত দলের দিকে মনোনিবেশ করলেন যখন তারা মসজিদে সুন্নাত নামাযে রত মুসলমানদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তিনি তাদেরকে মুসলমানদের নামাজের মধ্যকার বিভিন্ন পর্যায়ের কাজকর্ম বিশেষ করে সিজদাহর ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিলেন। তিনি এগুলোর উপর গুরুত্বারোপ করে বললেনঃ সমস্ত নবীগণ নামাজে সিজদাহ করেছেন।দলীল হিসেবে পুরাতন নিয়ম (old testament) থেকে উদ্ধৃতি দিলেনঃ-
অতঃপর, ইবরাহিম সেজদায় পড়ে গেলেন এবং আল্লাহ তার সাথে কথা বললেন। (পুরাতন নিয়মঃ যেনেসিসঃ ১৭/৩ )
"অতঃপর, মুসা ও হারুন দলের সামনে থেকে সমাবেশ স্থলের তাবুর গেটে প্রবেশ করে সিজদায় পড়ে গেলেন। এসময় তারা আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ দেখতে পেলেন"। (পুরাতন নিয়মঃ নুমবারস ২০/০৬ )
আহমদ দীদাত বললেনঃ তারা ইহুদী বা খৃষ্টান হওয়ার কারনে পূর্ব থেকেই তাদের ইবাদতের পদ্ধতি সম্বন্ধে ওয়াকিফহাল ছিলেন আর এখন মুসলমানদের ইবাদতের পদ্ধতি জানলেন।
অত্যন্ত শিষ্টাচার ও নম্রস্বরে আহমদ দীদাত তাদেরকে প্রশ্ন করলেন ইবাদতের কোন সিস্টেমটা যীশুখৃষ্টের পদ্ধতির বেশী নিকটবর্তী? তারা সমস্বরে জবাব দিলেনঃ নিঃসন্দেহে মুসলমানদের ইবাদতের পদ্ধতি অন্যান্য ধর্মের তুলনায় যীশু খৃষ্টের পদ্ধতির অধিক নিকটবর্তী।
প্রচুর সংখ্যক খৃষ্টান যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন তারা স্বাক্ষ্য দেন যে, ইসলাম গ্রহণ করার পরে তারা খাটি খৃষ্টানে (যীশুখৃষ্টের অনুসরণের দিক থেকে খৃষ্টানদের থেকে এগিয়ে) পরিণত হয়েছেন। কারণ, বর্তমানে খৃষ্টান বলতে শুধুমাত্র যীশুখৃষ্টের অনুসারীদেরকেই বুঝায়।
কিভাবে মুসলমানগণ দাবী করতে পারে যে, তারা যীশুখৃষ্টের অনুসরণে অন্যদের থেকে বেশী অগ্রগণ্য? আসুন! আমরা এটা যুক্তি দিয়ে চিন্তা করি। আমরা যখন নতুন নিয়মে(new testament) বর্ণিত, ঈসা (আঃ) সংক্রান্ত বক্তব্য পড়াশুনা করি তখন দেখতে পাই যে, ঈসা (আঃ) নামাযের ভিতর সিজদায় যমীনের উপর কপাল স্থাপন করতেন,সালামের বাক্য দ্বারা তার সাথীদেরকে অভিবাদন জানাতেন এবং দীর্ঘকাল পর্যন্ত রোজা পালন করতেন।
বাস্তবিকই, প্রথম দিককার খৃষ্টানগণ রাসুল (সাঃ) এর উপর নাযিলকৃত কুরআন শরীফ কর্তৃক তাদের আকীদা বিশ্বাস সত্যায়িত হওয়ার আগেই পুরোপুরিভাবে জানত যে, তারা ছিল মুসলমান। আল্লাহ বলেনঃ
অর্থাৎ, হে ঈমানদার গণ! তোমরা রুকু কর, সিজদাহ কর এবং তোমাদের প্রতিপালকের আনুগত্য কর। আর নেককাজ কর যাতে তোমরা কামিয়াব হতে পার। (সুরা হাজ্জঃ৭৭)
তোমরা কি দেখ না আল্লাহর একত্ববাদ যা মানব প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তাকে মানবতা কিভাবে গ্রহণ করছে বা গ্রহণ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে?
কিন্তু, আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি- যারা নিজেদেরকে ঈসা, মুসা ও ইবরাহিম (আঃ) এর অনুসারী বলে জাহির করছে আসলে তারা সরল সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে ছিটকে গেছে। বিশেষ করে খৃষ্টানরা ঈসা (আঃ) সংক্রান্ত আকীদা বা বিশ্বাসের ক্ষেত্রে অন্যায়ভাবে নতুনত্বের সৃষ্টি করেছে এমনকি তার সাথে এমন কিছু জুড়ে দিয়েছে যা তিনি কখনো বলেন নি।
এখন আপনারা নিজেদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন আজ কারা ঈসাকে (আঃ) সত্যিকারভাবে অনুসরণ করছে?
আপনারা জানেন মুসলমানগণ প্রতিদিন একাগ্রতার সাথে পাচবার নামাজ আদায় করে । তারা মাটিতে কপাল ঠেকিয়ে সিজদাহ দেয়। যে আকীদা- বিশ্বাসের তিনি প্রচার ও অনুশীলন করে গেছেন সেগুলোও অনুসরণ করে এবং একই প্রভুর আনুগত্য করে, যে প্রভুর আনুগত্য করে গেছেন ঈসা, ইবরাহিম, মুসা ও মুহাম্মদ (সাঃ)। এছাড়াও মুসলমানগণ পরস্পরকে অভিবাদন জানায় "আসসালামু আলাইকুম" বলে। ঈসা (আঃ) যেমন মরুভূমিতে চল্লিশদিন রোজা রেখেছিলেন তেমনি তারাও রমজান মাসব্যাপী রোজা রাখে।
সবশেষে
আসুন! আমরা পুর্ববর্তী নবীগণ যেভাবে নামাজ আদায় করেছিলেন সেভাবে নামাজ আদায় করি।
আমাদের ওয়েবসাইট থেকে "নামাজ শিক্ষা" বই ডাউনলোড করার জন্য আপনাকে দাওয়াত রইল।